|
চলার সময় শুধুমাত্র চশমাটি চালু করে দিলেই হল। সামনে, ডানে, বামে কোন বাঁধা পেলেই সশব্দে সতর্ক করে দেবে ব্যবহারকারিকে। সামনের জন্য ‘ফ্রন্ট’, ডানের জন্য ‘রাইট’, বামের জন্য ‘লেফট’ উচ্চারণ করে বস্তুর সঠিক অবস্থানটি জানিয়ে দেবে। ব্যবহারকারি থেকে বস্তুর দূরত্ব ভেদে উচ্চারণের তীব্রতাও হবে ভিন্ন, যা থেকে ব্যবহারকারি বস্তুর দূরত্ব সম্পর্কে একটি পূর্ণ ধারণা পেতে পারবেন।
ছোট্ট এই যন্ত্রটি দিয়ে প্রায় তিন মিটার দূর পর্যন্ত কোন বস্তুর অবস্থান ৯৮% নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। যন্ত্রটিকে দিনে এবং রাতে, এমনকি কুয়াশার মধ্যেও ব্যবহার করা সম্ভব বলে জানান উদ্ভাবকদ্বয়।
বিশেষ এই চশমাটি তৈরি করতে কী কী ব্যবহার করা হয়েছে সে সম্পর্কে তারা বলেন, যন্ত্রটিতে দূরত্ব নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, ‘আল্ট্রাসনিক’ সেন্সর, ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিআইসি’ সিরিজের মাইক্রোকন্ট্রোলার এবং আউটপুট ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ ইয়ারফোন। যন্ত্রটির শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ব্যাটারি যা একবার চার্জ করলে ব্যবহার করা যাবে টানা ত্রিশ ঘণ্টা। এমনকি চার্জ শেষ হয়ে গেলেও বিশেষ ক্যাবল ইন্টারফেসের মাধ্যমে এটিকে মোবাইলের সাথে সংযুক্ত করে সচল রাখা যাবে বাড়তি কয়েক ঘণ্টা।
তারা জানান, অন্ধদের জন্য বানানো হলেও সামান্য কিছু পরিবর্তন করে যন্ত্রটিকে ব্যবহার করা যাবে আরও অনেক ক্ষেত্রে। এটিকে ব্যবহার করা যাবে নিরাপত্তা কাজে, যেমন- কক্ষে অবাঞ্ছিত ব্যক্তির প্রবেশ সনাক্তকরণ, গাড়ী চুরি রোধে এটি রাখতে পারবে সক্রিয় ভূমিকা। যেকোনো ধরনের রোবোটিক প্লাটফর্মেও এটিকে ব্যবহার করা যাবে। এটির মাধ্যমে দূরত্ব পরিমাপ করাও সম্ভব। এমনকি অন্ধ ব্যক্তিরা এটি পরে পানিতে সাঁতারও কাটতে পারবেন বলে জানালেন উদ্ভাবকগণ।
সবচেয়ে আশার কথা এই যে, যন্ত্রটির ক্রয়মূল্য থাকবে সবার হাতের নাগালে। কেননা এতে খরচ হয়েছে মাত্র সাতশ’ টাকা। তবে বাজারজাত করতে পারলে খরচ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানালেন তারা।
ভবিষ্যতে তারা এই প্রোজেক্টটিকে আরও অনেক দূরে নিয়ে যেতে চান। খরচ কমিয়ে আরও নতুন নতুন সুবিধা ও প্রযুক্তিবান্ধব করার পরিকল্পনাও আছে বলে জানান তারা।
তারা আরো বলেন, ভবিষ্যতে যন্ত্রটিতে থাকবে জিপিএস টেকনোলজি এবং এটিকে সংযুক্ত করা হবে স্মার্টফোনের সাথে যাতে অন্ধব্যক্তিরা তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। সেই সাথে থাকবে অন্ধ ব্যক্তিদের উপর সার্বক্ষণিক অনলাইন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং ব্যবহারকারিদের সুবিধার্থে সকল নির্দেশনা দেয়া হবে বাংলা ভাষায়।
যন্ত্রটি নিয়ে খুবই আশাবাদী উদ্ভাবকরা। বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশে যন্ত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন তারা।
কুয়েটের এই কৃতী শিক্ষার্থীদ্বয় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মত আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আগ্রহী। প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে তারা তাদের উদ্ভাবন ক্ষেত্রকে আরও সম্প্রসারিত করতে ও ব্যবহার উপযোগী নানা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবেন বলে তারা আশা ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে তারা সরকার ও গবেষণাবান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট আন্তরিক সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন।
নাজমুল ও মোস্তফা জানান, তাদের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ছিলেন কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শেখ সাদি।
কুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শেখ সাদি যন্ত্রটি সম্পর্কে বলেন, দেশের বাইরেও এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে এত হালকা ও ব্যবহারবান্ধব করা যায়নি। ব্যবহারের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে প্রাথমিক অবস্থায় যন্ত্রটি বেশ ভাল সহায়তা প্রদান করছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে আরও ব্যবহার বান্ধব ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে উন্নত করা সম্ভব।