|
‘ইচ্ছে’ প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে ছোট্ট একটি গল্প। দিনটি ছিল ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। ক’দিন পরই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই এ উপলক্ষে ক্যাম্পাসসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ফুল বিক্রির ধুম পড়ে। ক্যাম্পাসের একঝাঁক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে বসে গেলেন ফুল বিক্রি করতে। উদ্দেশ্য ফুল বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে গরীব ও দুস্থদের সেবা করা। এর কিছুদিন পর দেখা গেল, ফুল বিক্রি করে বেশ কিছু অর্থ উপার্জিত হয়েছে। ওই টাকা দিয়ে তারা গরীব ও দুস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করলেন এবং তাদের একবেলা আহার করালেন। কিন্তু একটা ভালো কাজ তো আর বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। তাই তারা সিন্ধান্ত নিলেন একটি সংগঠন গড়ে তুলবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। মানব সেবায় নিবেদিতপ্রাণ এই তরুণরা গড়ে তুললেন ‘ইচ্ছে’ নামের সংগঠনটি।
‘মেধা দেই শ্রম দেই, আর্ত মানবতার সেবা করি; পৃথিবীকে বদলে দেই’ এ স্লোগানে শুরু হয়েছে তাদের পথচলা। শিক্ষাবঞ্চিত পথশিশুদের অক্ষরজ্ঞান শেখাতে তারা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইচ্ছে’ নামের একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেখানে প্রায় ২৫ পথশিশু শিক্ষাগ্রহণ করছে।
প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত এসব শিশুদের পাঠদান করানো হয়। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারের পাশে গো-খামারের বারান্দায় চলছে এই আলো ছড়ানোর কার্যক্রম। ছোট্ট একটি বারান্দায় কষ্ট করে শুধু ইচ্ছার জোরে পড়াশুনা করছে এই শিশুরা। তবে শিশুদের মনে আনন্দের কোনো কমতি নেই। কারণ এখানে নেই কোনো বেতের ভয়, নেই বেতনের মতো কোনো ঝামেলা। আছে শুধু আনন্দ। আনন্দের মাধ্যমেই এখানে শিশুরা সব কিছু শেখে।
শিশুদের বই-খাতা, কলম-পেন্সিলসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ ‘ইচ্ছে’ই বহন করে থাকে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব ব্যয়ভার বহন করতে ‘ইচ্ছে’র কোনো দাতা সংস্থা বা আলাদা কোনো ফান্ড নেই। সংগঠনের সদস্যদের প্রদেয় চাঁদা এবং বিভিন্ন দিবসে ফুল বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে চলে এর যাবতীয় কার্যক্রম।
শুধু শিক্ষার প্রসারেই না, ‘ইচ্ছে’ কাজ করে যাচ্ছে আর্ত মানবতার সেবায়ও। দুস্থদের আহার করানো, শীতবস্ত্র বিতরণ, ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছুদের সহায়তা দান প্রভৃতি কাজগুলো তাদের সমার্থক শব্দতে পরিণত হয়েছে। সংগঠনের একঝাঁক আত্মনিবেদিত কর্মী নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন এসব মানবসেবামূলক কার্যক্রমে।
সংগঠনের সদস্য সেলিম রেজা জানান, ‘মানব সেবায় কাজ করার তৃপ্তিই আলাদা। নিজেকে এরকম কার্যক্রমে নিয়োজিত রেখেছি ভাবলেই মনটা তৃপ্তিতে ভরে ওঠে’।
তবে সংগঠনের অনেক সীমাবদ্ধতার কথা জানালেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান সুমন। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘শিশুদের বই-খাতা কিনে দিতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। শুধু সদস্যদের চাঁদায় এত কিছুর জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও আমাদের এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই’।
তবু ও শ্রেণীবৈষম্যের এই পৃথিবীতে পরিচয়হীন এসব শিশুদের সংগঠন ‘ইচ্ছে’কে আর্থিক সাহায্যে বেগবান করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।
সুত্রঃ বাংলামেইল২৪ডটকম