|
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৭ বছর অতিক্রম করেছে তাদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে ৭ বছর অতিক্রম করেছে ৫২টি। ৫২টির মধ্যে মাত্র ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। বাকি ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয় নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। উল্লেখ্য, এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আগেও আলটিমেটাম দেয়া হলেও কোন কাজে আসেনি। দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সরকারের নিয়ম মানছে না। অবৈধ ক্যাম্পাস খোলে বাণিজ্য করছে। মালিকানার দ্বন্দ্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় দখল পর্যন্ত হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে একাধিক ট্রাস্টিবোর্ড। সরকার একাধিকবার নোটিশ দিলেও কোন কাজে আসছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও অবৈধ ক্যাম্পাসে রমরমা ব্যবসা করছে কমপক্ষে ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দারুল ইহসান, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, কুইনস ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং আউটার ক্যাম্পাস রয়েছে। রয়েছে একাধিক মামলা। অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে একাধিকবার শোকজ করা হলেও তারা আদালতের আশ্রয়ে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে। রয়েছে মামলা আর পাল্টা মামলা। এসব মামলা একটি কোর্টে এনে শুনানির মাধ্যমে ত্বরিৎ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া ইবাইস সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাদমান পক্ষগুলোর বিরোধ সালিশির মাধ্যমে নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আইনানুগভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে পরিচালনা করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী সমস্যা নিয়ে ২৬ শে জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনিয়ম, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা, অনিষ্পন্ন কার্যাবলি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করা হয়নি ২০১৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। না করলে তাদের সাময়িক সনদ বাতিল করা হবে এবং ওই সময়ের পরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে বছরের পর বছর শিক্ষার নামে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নেই এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ কোন প্রস্তাবও পাঠাননি- সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই সরকার নিজ উদ্যোগে নিয়োগ দেবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অডিট করানো হয় না বা অডিট রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় না, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যৌথ উদ্যোগে একটি অডিট টিম গঠন করা হবে। এ টিম পর্যায়ক্রমে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর অসামঞ্জস্যপূর্ণ ধারাগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে শিগগিরই এক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই ক্রসবর্ডার হায়ার এডুকেশন অধ্যাদেশ জারি করা হবে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতারণার হাত থেকে সতর্ক করার লক্ষ্যে সরকার ও ইউজিসি’র অনুমোদনবহির্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি যৌথভাবে নিয়মিত পরিদর্শন করবে এবং তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গুটিকয়েক ছাড়া আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা-জমি ছিল না। যারা নিয়ম-কানুন মানছে না তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। তিনি বলেন, যারা ব্যবসা করছে অথচ নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৭ বছর অতিক্রম করেছে অথচ নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। ২০১৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে তাদের অনুমোদন বাতিল হবে। এ ছাড়া অবৈধ ক্যাম্পাসওয়ালাদের বিরুদ্ধেও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সুত্রঃ মানবজমিন